মেথির উপকারিতা: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা একগ্লাস জলে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই জল পান করলে হতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান ।যেমনঃ রক্তে সুগারের মাত্রা কমে, দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়,হজম সমস্যা সমাধান হয,এমনকি চুল পড়ার হার কমে যায় ।এছাড়াও মেথির উপকারিতা আছে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,উপকারী ফ্যাট,ডায়েটারি ফাইবার এবং খনিজ উপাদান। যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে।তাই আজকের আমরা জানবো মেথি খাওয়ার উপকারিতা কি এবং আপনার ডায়েটে মেথিকে যোগ করলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে ।
• মেথির পুষ্টিগুণ
এক চামচ মেথির বীজে পুষ্টিগুণ রয়েছে-
১. প্রোটিনঃ ৩ গ্রাম
২. ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
৩. ফাইবারঃ ৩ গ্রাম
৪. ক্যালরিঃ ৩৫ ক্যালরি
৫. ম্যাগনেসিয়ামঃ ৫ শতাংশ
৬. লোহাঃ ২০ শতাংশ
৭. ম্যাঙ্গানিজঃ ৭ শতাংশ
মেথির উপকারিতা কি
আমাদের অতিপ্রিয় পাচফোরনের একটি উপাদান হলো মেথি । মেথি ব্যবহার শুধুমাত্র রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নয় ,আয়ুর্বেদিক থেকে শুরু করে চুলের পরিচর্যায় মেথির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও মেথির প্রচুর উপকারিতা রয়ছুর, যেমনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাঁরা নিয়মিত মেথি ভেজানো জল সকালে খেতে পারেন। ফলে শরীরে গেলেক্টমেলনের পরিমাণ বাড়তে থাকে ।যা শকরা শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কারণ মেথিতে উপস্থিত কিছু অ্যামাইনো এসিড ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তার জন্য টাইপ টু ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না ।খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে হৃদ রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এমনটা হওয়ার পেছনে হাই কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপের ভূমিকাকে কোন ভাবে অস্বীকার করা যায় না । তাই 25 থেকে 50 বছর বয়সীদের নিয়মিত মেথি ভেজানো জল পান করা উচিত।কারন এমনটা করলে মেথির মধ্যে থাকা স্টেডিও ডালস উপেনিন নামক উপাদান কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটায়।। বর্তমান সময়ে প্রচুর মানুষ গ্যাস অম্বল এর মতো সমস্যায় ভুগছেন ,সেক্ষেত্রে হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটাতে পারলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে ।বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মেথি বীজ বা মেথি ভেজানো জল খেলে বাওয়েল মুভমেন্ট এর উন্নতি ঘটে। ফলে পেট সংক্রান্ত আর কোনো সমস্যাই থাকে না ।আসলে মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,যা এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। চুল পড়ার হার কমায় ।বর্তমান সময়ে ধুলো ও দূষণের ফলে চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যায় কমবেশি সকলেই ভোগেন।এই সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করতে মেথির ভূমিকা অপরিসীম। কারন মেথিতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা কি না টাক পড়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে আমাদেরকে বাঁচাতে পারে ।আমাদের চুলে লেথিসিন নামক একটি পদার্থ থাকে, যা চুল ঝরে পড়ে যাওয়াকে আটকায়। আর মেথি দিয়ে বানানো.
চুলের জন্য পেস্ট ব্যবহার করলে এই লেথিসিন তৈরি হয় যা কিনা চুল মজবুত ও ঘন করে চুলের সমস্যা কে বিদায় করে।একটি পাত্রে 1 টেবিল চামচ মেথি বীজের গুড়ো নিয়ে সামান্য জল মিশিয়ে নিন, এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া ভালভাবে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট রেখে দিন তারপর ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই প্যাক ব্যবহার করলে আপনার চুল হয়ে উঠবে ঘন ও সুন্দর ।ওজন কমাতে সাহায্য করে। মেথিতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়া্ম, ম্যাঙ্গানি্জ , তামা ,ভিটামিন b6,প্রোটিন ,ফাইবার ও অনেক উপকারী খনিজ উপাদান থাকে ।তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জলে ভেজা নো মেথি বীজ খাওয়ার অভ্যাস আরম্ভ, করলে শরীরে ফাইবার এর মাত্রা বাড়তে আরম্ভ করে , ফলে স্বাভাবিকভাবেই খিদে কমে যায় ।এমনটা হওয়ার কারণে খাওয়ার পরিমানে লাগাম পড়ে । ফলে সহজে ওজন কমতে শুরু করে ।জ্বরের প্রকোপ কমে ।ওয়েদার চেঞ্জ এর কারণে আপনি যদি জ্বরে বারবার আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এক গ্লাস করে মেথি ভেজানো জল.
পান করতে শুরু করুন ,দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। আসলে মে্থিতে থাকা কিছু উপকারী উপাদান রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে জ্বরের প্রকোপ কমতে বেশি সময় লাগে না ।এছাড়া সর্দি-কাশি কেউ সারাতেও এই ঘরোয়া টোটকাকে ব্যবহার করতে পারেন । কিডনি ফাংশনে উন্নতি ঘটে, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে পলিফেনোলিক ফেবোনরসের মাত্রা বাড়তে শুরু করে ।এই উপাদানটি কিডনি ফাংশন এর উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে কিডনির সেলের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।এছাড়া মেথির অনেক উপকারিতা আছে, যেমনঃ বাতের ব্যথা কমায়, লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় , হৃদযন্ত্র কে সুস্থ রাখে এবং তারুণ্যকে ধরে রাখতে সাহায্য করে ।তাহলে বুঝতে পারছেন মেথির উপকারিতা ,এর জন্য মেথি কে সুপারফুড বলা হয় ।
আরো জানুন কলার উপকারিতা ও অপকারিতা