আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ১৫ টি জাদুকরী থানকুনি পাতার উপকারিতা ।আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর ল্যাটিন নাম centella aciatica। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। ছোট প্রায় গোল আকৃতির পাতার মধ্যে রয়েছে ঔষধী সব গুন । থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময় অতুলনীয় ।প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে ।খাদ্য উপায় এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে ।একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে , তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সব শরীরের প্রতিটি অংশের কার্যক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরো অনেক উপকার যেমন ধরুন ।
থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ
১. চুল পড়ার হার কমে । নানা সময়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরের পুষ্টির ঘাটতি দূর হয় । ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে । চুল পড়ার হার কমাতে আরেকভাবে থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন ।পরিনত থানকুনি পাতা থেঁতো করে নিতে হবে তারপর তার সঙ্গে পরিমাণমতো তুলসী পাতা এবং আমলার মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে ।সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে ।দশ মিনিট পরে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা ।প্রসঙ্গত , সপ্তাহে কম করে দুই বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলে দেখবেন কেল্লা ফতে ।
২. টক্সিন উপাদানেরা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়ঃ নানাভাবে সারাদিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরের রক্তে প্রবেশ করে ।এইসব বিশেদের যদি সময় থাকতে থাকতে শরীরে থেকে বের করে দেয়া না যায় তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ । আর এই কাজটি করে থাকে থানকুনি পাতা ।কিভাবে করে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলো বেরিয়ে যায় । ফলে একাধিক রোগ দুরে থাকতে বাধ্য হয় ।
৩. ক্ষতের চিকিৎসা করে । থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়ওনিনস এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । তাইতো এবার থেকে কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দেবেন ।দেখবেন নিমিষেই কষ্ট কমে যাবে ।
৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটেঃ থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতা উন্নতি করে । কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিকমত হয় সেদিকে খেয়াল রাখে ।ফলে বদহজম এবং গ্যাস অম্বল এর মতো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না ।
৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়ঃ থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো এসিড বিটা ক্যারোটিন ফ্যাটি এসিড ও ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টি ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলি রেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ।সে সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে ।
৬ . আমআশয়ের মতো সমস্যার সমাধান করেঃ নিয়ম করে প্রতি দিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতা খেতে হবে ।এমনটা টানা ৭ দিন নিয়ম করে করতে পারেন ।এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আরেকভাবে থানকুনি পাতা কে কাজে লাগাতে পারেন । প্রথমে পরিমানমতো থানকুনি পাতা বেটে নিন তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান মিশ্রণটি 2 চামচ করে দিনে দুইবার খেলে দেখবেন কষ্ট কমে যাবে ।
৭. পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে আসেঃ অল্প পরিমাণে আম গাছের ছালের সঙ্গে একটা আনারসের পাতা ,হলুদের রস এবং পরিমান মত থানকুনি পাতা ভালো করে মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিন ।এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যেকোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায় । সে সঙ্গে ক্রিমির এর প্রকোপ কমই।
৮.কাশiর প্রকোপ কমে: 2 চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায় । আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই । সেক্ষেত্রে কাশির কোন চিহ্ন থাকবে না ।
৯. জ্বরের প্রকোপ কমে: সিজন চেঞ্জের সময় যারা প্রায়শই ঝড়ের ধাক্কায় কাবু হয়ে থাকেই, তাদের তো থানকুনি পাতা খাওয়া মাস্ট! কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে জ্বরের সময় এক চামচ থানকুনি এবং এক চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়ে জ্বর সেরে যায় । সে সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা ও কমে ।
১০. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ঃ অসময়ে খাওয়ার কারণে ফেঁসেছেন গ্যাস্টিকের জালে ?থানকুনি পাতা কিনে আনুন বাজার থেকে । তাহলেই দেখবেন সমস্যা একেবারে হাতের মধ্যে চলে আসবে ।আসলে এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুণ কাজে আসে । কি সেই ঘরোয়া চিকিৎসা ? হাফ লিটার দুধের 250 গ্রাম মিস্রি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে ফেলুন ।তারপর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন । এমনটা এক সপ্তাহ করলেই দেখবেন উপকার মিলবে ।
১১ .অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়: রাতে কি ঠিক মতো ঘুম হয় না? তা হলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন থানকুনি পাতা। দেখবেন, উপকার (মিলবে একেবারে হাতে-নাতে। কারণ, এতে রয়েছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা স্ট্রেস লেভেল কমায়। সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না।
১২.শরীরেচ জ্বালাপোড়া দূর করেঃ থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।
১৩.অলসার দূর করেঃ পেটের যে কোনো রোগে থানকুনি পাতা ভীষণ উপকারী। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
১৪.মানসিক অবসাদ দূর করেঃ মানসিক অবসাদে ভুগলে তা দূর করার জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।
১৫.মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়েঃ নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
কালোজিরার উপকারিতা জানতে ভিজিট করুন