খেজুরের উপকারিতা:খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কম বেশি ধারণা আছে। রমজান মাস খেজুরের কদর অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ সময় কমবেশি সবাই খেজুর খেয়ে থাকেন। খেজুরে অত্যাধিক পুষ্টিগুণ আছে। মিষ্টি ফল হলেও ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালোরি হওয়ায় খেজুর ওজন কমাতেও সাহায্য করে।খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তাই প্রতিদিন খেতে পারেন খেজুর।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই খেজুর থেকে আসে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।আমরা অনেকেই জানি খেজুর খাওয়া সুন্নত, আবার এই একটি সুন্নতের পেছনেও আছে অনেক উপকারিতা । রোজা শেষে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনেরও জোগান দেওয়া ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম।শুকনো খেজুরেও শরীরের দরকারি খনিজ মেলে।শুকনা খেজুর এদেশে খুরমা নামে পরিচিত। এগুলো মূলত পাকিস্তান থেকে আসে।শুকনা খেজুর এদেশে খুরমা নামে পরিচিত। এগুলো মূলত পাকিস্তান থেকে আসে। ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ হয়। মরু অঞ্চলের এ ফলের ঔষধিগুণ ও স্বাদ, দুই কারণেই এটি জনপ্রিয়।খেজুরকে আরবিতে তুমুর বলে। মদিনায় হাজিরা দেশে ফেরার আগে খেজুর কেনায় ব্যস্ত থাকেন।
গাছে ফল উৎপাদনের জন্য সচরাচর চার থেকে আট বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদনের উপযোগী খেজুরগাছে ফল আসতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। পূর্ণাঙ্গ খেজুরগাছে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৮০-১২০ কিলোগ্রাম (১৭৬-২৬৪ পাউন্ড) ফল পাওয়া যায়।
সৌদিতে অনেক জাতের খেজুর হয়।বিশ্ববাজারে প্রায় ১০০ জাতের খেজুর আছে। যার মধ্যে ২২-২৩ জাতের খেজুর ঢাকার বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু জনপ্রিয় খেজুরের নাম হলো আজুয়া, আনবারা, সাগি, সাফাওয়ি, মুসকানি, খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান রয়েছে। বাদ-বাকি অংশে খনিজসমৃদ্ধ বোরন, কোবাল্ট, ফ্লুরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।খেজুরে আছে প্রচুর শক্তি, এমিনো এসিড, শর্করা ভিটামিন ও মিনারেল। খেজুরে রয়েছে বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক।
খেজুরের উপকারিতা –
১।শক্তি বর্ধনে: খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।.
২।ক্যান্সার প্রতিরোধ: পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খান, তাঁদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক কম থাকে।এছাড়াও মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও এই ফল বেশ কার্যকরী।
৩।যৌন উপকারিতাঃকোরআন হাদিছে খেজুর সম্পর্কে অনেকবার বলা হয়েছে । খেজুর খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
বিশেষ করে প্রতি দিন সকালে ৫ টি করে খেজুর খেলে যৌন ক্ষমতা স্থায়ী হয় । তাই বিবাহীতরা নিয়মিত খেজুর খেলে বিশেষ উপকার পাবেন ।
৪।হজম শক্তি বাড়ায়ঃ খেজুরের মধ্যে আছে ফাইবার ও অদ্রবীভূত আঁশ । যা আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
৫।মায়ের বুকের দুধ: খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার, যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।.
৬।পটাশিয়ামঃ খেজুরের চেয়ে ভালো পটাশিয়ামের উৎস আর হয় না । তাই নার্ভ সিস্টেমর মেটাবলিজম ঠিক রাখতে খেজুরের জুরি মেলা ভার ।
৭।ফেনলঃ গবেষকদের মতে শুকনা খাবারের মধ্য খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে! অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে এই পলিফেনল; তাই আমাদের বেশি বেশি করে খেজুর খাওয়া উচিত ।
৮।কার্বোহাইড্রেটঃ খেজুরে ৭৫ ভাগই কার্বোহাইড্রেট । তাই সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের পরে খেজুর খেলে তারাতড়ি শক্তি আসে ।
৯।হাড় গঠন: ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।.
১০।দুর্বল হৃদপিণ্ড: হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ খেজুর।খেজুরে থাকা নানা খনিজ হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম যা বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরণের কোলেস্টেরল কমায় (LDL) এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।।
১১।প্রোটিনঃ আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। খেজুর হল প্রোটিন সমৃদ্ধ। ফলে আমাদের পেশী গঠন করতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য খুব অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ। যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনও কখনও ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী।
১২।ওজন হ্রাস: খেজুরে কোনও কোলেস্টেরল এবং বাড়তি পরিমাণে চর্বি থাকে না।মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দেয় ক্ষুধার জ্বালা। এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটা খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়।
১৩।স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়ঃ খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকার কারণে এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্র-ছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভাল থাকে।
১৪।অন্ত্রের গোলযোগ: অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
১৫।মস্তিষ্ক সচল রাখেঃ আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অসুখ প্রতিরোধ করে খেজুর । খেজুরের সব থেকে বড় গুণ হল খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এই খেজুর।
১৬।দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক।খেজুরে আছে প্রচুর vitamin A যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে ।খেজুরে লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায় তা রেটিনা ভালো রাখে।
১৭।কোষ্ঠকাঠিন্য: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
১৮।সংক্রমণ রোধ: যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় বেশ কাজ দেয়।
১৯।রক্তশূন্যতা প্রতিরোধঃ প্রচুর মিনারেল সঙ্গে আয়রন থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতা রোধ করে। তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন।খেজুর দেহে রক্ত উৎপাদন করে ।
২০।স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়: খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে, যা মানুষের স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
২১।খেজুর মনকে উৎফুল্ল করেঃ খেজুরে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন, যা সিরোটোনিন হরমোন তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই মিষ্টি ফল মনে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়, খুশি রাখে।
২২।উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম।প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে করে প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমায় এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
২৩।স্ট্রেস কমায়ঃ স্ট্রেস ও নার্ভাসনেসের কারণে মাথা ব্যথা হলে তা সহজেই দূর করতে পারে খেজুর। খেজুরে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা স্ট্রেস দূর করতে সহায়ক।
২৪।ডায়াবেটিস রুখতে: দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশের আছে নানান উপকারিতা। যার মধ্যে একটি হল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
২৫।গর্ভবতীদের জন্য উপকারিঃ গর্ভবতী নারী খেজুর খেলে , জরায়ুর ১২মাংশপেশি দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে , প্রসব হতে সাহায্য করে ।
২৬।খুসখুসে কাশি দূর করেঃ সাধারণত যাদের খুসখুসে কাশি হয় তারা ২০-২৫ গ্রাম খেজুর, ২ কাপ গরম জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওই খেজুর চটকে নিয়ে সরবতের মতো করে খেলে খুসখুসে কাশি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
২৭।ত্বককে টানটান রাখে
অনেক সময়ে বয়স বাড়ার ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে ভিটামিন বি রয়েছে। যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি খেজুর নিয়ম করে খান। দেখবেন আস্তে আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে।
২৮।হজম ও রুচি বাড়ায়: রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো তুলনাই হয় না। শিশুদের যারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।খেজুর পেটের গ্যাস দুর করে।
২৯।ডিহাইড্রেশন দূর করেঃ খেজুর পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে ।
৩০।পায়খানা বন্ধ করেঃ খেজুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।
৩১।পাকস্থলি ভালো রাখতেঃ খেজুর যকৃৎ ও পাকস্থলি ভালো রাখে ।
৩২। সর্বশেষ খেজুরের উপকারিতা শিশুদের রোগবালাই: খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে।