কালোজিরার উপকারিতা কি? বেনিফিটস অফ ব্ল্যাক কিউমিন সিং ।কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে আমরা মোট ৩৮ টি গবেষণাপত্র পেয়েছি ।মানে বুঝতেই পারছেন, কালোজিরা খেলে এমন কিছু উপকার পেতে পারেন যা অনেক খাবার থেকেই পাবেন না ।
প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “ তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি এতে রয়েছে”। সহীহ বুখারীঃ ১০/১২১
কালোজিরার উপাদানসমূহঃ
কালোজিরার মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদানসমূহ।কালোজিরার রয়েছে ক্যন্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।কালোজিরের মধ্যে রয়েছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন, লিনোলিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম ,ফসফেট, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি ২, নায়াসিন, ভিটামিন-সি, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ,প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি কি উপকার পাবেন।
কালোজিরার উপকারিতা:
১. কোলেস্টেরল কমাতে উপকারী কালোজিরা। ফ্যামিলি এন্ড কমিউনিটি মেডিসিন জার্নালে 2012 তে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের জার্নালের 2016 2017 তে দুটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার ভূমিকা নিয়ে ।গবেষণা পত্রে দেখা যাচ্ছে কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল ও ট্রাই গ্লিসারাইড কমায়
এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়ায়। মানে সামগ্রিক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী হতে পারে। ট্রাই করে দেখতে পারেন ।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধে কালোজিরার উপকারিতা ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফর্মেশন ও (USA) নেশনাল লাইব্রারি অফ মেডিসিন জার্নালে গবেষণামূলক দুটো আর্টিকেলে প্রকাশিত টেস্টটিউব স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে কালোজিরার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাইমোকুইনান আপনার ব্লাড ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার্ ,লাং ক্যান্সার , প্রোস্টেট ক্যান্সার , স্কিন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমাবে ।যদিও টেস্টটিউব স্টার এর ফলাফল আপনি খাবার হিসেবে নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারে ।ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী হতে পারে।
৩. কালোজিরা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে উপকারী ।অনেক কিছুকেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বলে দাবি করা হয় কিন্তু তার বেশিরভাগ দাবির পিছনেই কোনো বিজ্ঞান নেই। কিন্তু কালোজিরা যে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এটা নিশ্চিত। আমরা মোট চারটি গবেষণাপত্র পেয়েছি ।যাতে দেখা যাচ্ছে , বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ ঠেকাতে কালোজিরা বেশ উপকারী ।ট্রাই করে দেখতে পারেন ।
৪. কালোজিরা আপনার লিভার কে রক্ষা করে , আপনার শরীরের উপকারী পদার্থগুলোকে হ্যান্ডেল করে আপনাকে সুস্থ রাখে । কিন্তু লিভারকে ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করবে কে? প্রাণীদের ওপর কড়া গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, কালোজিরার লিভার কে রক্ষা করে ।
৫. কালোজিরা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে । কালোজিরার উপকারিতার আমরা ১৩টি গবেষণাপত্র পেয়েছি ।যাতে দেখা যাচ্ছে কালোজিরা ফাস্টিং ব্লাড সুগার ,কমানোর সাথে সাথে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমায় ।ফলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে কালোজিরা উপকার হতে পারে ।
৬.স্টমাক আলসার অনেকেরই বড় সমস্যা । ইঁদুরের ওপর করা দুটো স্টাডি থেকে দেখা যাচ্ছে কালোজিরা যেমন আপনার স্টমাক আলসারের সম্ভাবনা কমায় , তেমনি স্টমাক আলসার ও কমাতে পারে ।ট্রাই করে দেখতে পারেন, অর্থাৎ কালোজিরা খুবই ইউনিক একটি মসলা । আপনি প্রতিদিন খাবারের মধ্যে ১ চা-চামচ কালোজিরা খেলে দারুন উপকার পাবেন ।
৭.সর্দি-কাশিতে আরাম পেতে, এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু বা এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে আধ চা চামচ কালোজিরের তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খান। পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুকালে, শ্লেষ্মা তরল হয়। পাশাপাশি, এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি কমে। বুকে কফ বসে গেলে কালিজিরে বেটে, মোটা করে প্রলেপ দিন একই সাথে । হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সমাধানে কালোজিরা দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উপশম হয়।
৮.বাতের ব্যাথায় আরাম পেতে, ব্যথার জায়গা ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এক চা- চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে ১ চা চামচ কালোজিরার তেল ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার খান। ২-৩ সপ্তাহ টানা খেলে ফল মিলবে হাতেনাতে। পিঠে ব্যথায় ভুগছেন? কালোজিরার থেকে তৈরি তেল আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে ।
৯. চোখে সমস্যা চোখেরপীড়া রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরূতে কালোজিরার তেল মালিশ করূন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টীংচার সেবনে আর তেল মালিশে উপকার হবে। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন।
১০.যৌন-দুর্বলতা কালোজিরা চুর্ণ ও যয়তুনের তেল (অলিভ অয়েল), ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাটি মধু = একত্রে মিশিয়ে সকাল খাবারের পর ১চামচ করে সেব্য। কালোজিরার মূল আরক, হেলেঞ্চা মুল আরক, প্রয়োজনীয আরো কোন মুল আরক অলিভ অয়েল ও মধুসহ পরীক্ষনীয়।
১১. সৌন্দর্য বৃদ্ধি চেহারার নমনীয়তা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধি অলিভ অয়েল ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে অঙ্গে মেখে ১ ঘন্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলন।
১২.নিয়মিত পেট খারাপের সমস্যা থাকলে কালোজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭-৮ চা চামচ দুধে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে সাত দিন ধরে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ডায়রিয়া সেলাইন ও হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় এক চামচ কালোজিরার তেল দিনে ২ বার ব্যবস্থেয়। এর মুল আরকও পরী্ক্ষনীয়।
কালোজিরার উপকারিতা ও ভেষজ ব্যবহারঃ
রুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালিজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী। কালোজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালোজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী।
১. সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালিজিরা পিষে খেলে শিশু দুধ খেতে পাবে বেশি পরিমাণে।
২. মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩. দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।
৪. কালিজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। কালিজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে।
৫. কালিজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। দেহের কাটা ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। নারীর ঋতুস্রাবজনীত সমস্যায় কালিজিরা বাটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৬. তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাঁটা বা কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগালে ফোড়ার উপশম হয়।
কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা হয়। প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য, প্রসবোত্তর কালে কালিজিরা বাটা খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালিজিরা খাওয়া হয়।
আরো জানুনঃ মেথির উপকারিতা কি